প্রিয় আবীর,
চিঠির শুরুতে আমার সালাম ও স্নেহ নিও। ভার্চ্যুয়াল চিঠিটা পড়তে পড়তেই আমার পরিচয়টা পেয়ে যাবা। বাগাড়ম্বর না করে মোদ্দা কথায় আসি, যেজন্য তোমাকে চিঠিটা লেখা। উপরে মহান আল্লাহপাক ছাড়া এ ভবে আমার থেকে ভালো তোমার নাড়ীনক্ষত্র কে ই বা জানে! এই তো এই বসন্তে ২২ এ পা দিলে, এরমধ্যে ১টি বারও কি ভেবে দেখেছ যে এই ২১ বছরের নাতিদীর্ঘ জীবনে কীই বা করলাম আর কি কি করতে পারতাম? একাডেমিক ক্যারিয়ার নিয়ে বেশ আফসোস করো তাই না? অনেক মিস করো স্কুল লাইফটাকে, সেই সময়কার একাডেমিক পারফর্মেন্সকে। নিজের বর্তমান অবস্থান নিয়ে প্রতিবারই ভাগ্যকে দুষেছো, নিজের অসুস্থতাকে দুষেছো। আসলে কি জানো, তুমি এক মস্ত বড় অলস। তোমার থেকে আরও শতগুণ প্রতিবন্ধকতাকে মোকাবেলা করে মানুষ চেষ্টা চালিয়ে গিয়ে সফল হচ্ছে। যেখানে কিছু হলেই তোমার সাবকন্স্যাস মাইন্ডে একটা প্রোগ্রাম এক্সিকিউট হয়, "আমাকে তো ঠিকঠাক স্যার দেয়া হয় নাই, প্রোপারলি গাইড করা হয় নাই, আমি তো অসুস্থ ছিলাম...।"
তুমি কি করতে পারো না পারো সেটা তোমার থেকে আমি ভালো জানি। আল্লাহপাকের ইচ্ছায় জেনেটিকভাবে তুমি অনেক গুণ পেয়েছো। তার মধ্যে একটা হল, তুমি যথেষ্ট মেধাবী। তবে তারপাশাপাশি তুমি একটা "আলসে-কানাই" যেটা ক্লাস এইটে তোমার স্যার তোমার প্রতি অনেকটা অসন্তুষ্ট হয়ে বলেছিলেন। প্রত্যেক কাজেই অল্প ইনপুট দিয়েই তুমি বেশী আউটপুট গেইন করতে চাও। আরে ভাই! তুমি কোথাকার কোন নিকোলা টেসলা যে ফটোগ্রাফিক মাইন্ড কাজে লাগিয়ে সববার উতরে যাবা? হ্যাঁ, মানলাম তুমি মাল্টিটেলেন্টেড। গান করো, নাচ করো, লেখালেখি করো, বিতর্ক করো, আবৃত্তি করো। কিন্তু ভাই, এর মধ্যে কোন বিষয়টাতে তুমি নিজেকে সেরা বলে দাবি করতে পারো? তুমি আসলে "Jack of all trades, master of none." এই মেধা ধুয়ে কি তুমি পানি খাবা?
স্কুললাইফের ফ্রেন্ড সার্কেলে তোমার আশেপাশের অন্যদের সাফল্যটাই দেখেছো আর তাদের সাথে তুলনা করে আফসোস করেছো। একবারও কি তাদের হার্ডওয়ার্কিংটা দেখেছো? তাদের দেখে কিছু শেখার চেষ্টা করেছো একবারও?
এখনও সময় আছে, আলসেমি ঝেড়ে, ফিজিক্স নিয়ে পড়তে না পারার আফসোসটা ছেড়ে যা নিয়ে পড়াশোনা করছো সেটাতে নিজেকে সেন্টপার্সেন্ট কন্ট্রিবিউট করার চেষ্টা করো, তোমার সফলতা কেউ আটকাতে পারবে না!
একটা জিনিস কি খেয়াল করে দেখোছো আবীর? একসময় তোমাকে যারা ভালোবাসতো, তারা আজ তোমায় কিছুটা এড়িয়ে চলে। একবারও ভেবে দেখোছ এটা কেন হয় তোমার সাথে? শোনো, তোমাকে একটা কথা বলি। তোমার শত ভালো কাজের সামনে তোমার একটা কাজই সেই কাজগুলোকে ভুলিয়ে দিয়ে তোমার জন্য মানুষের মনে ক্ষোভের জন্ম দিতে পারে। সেই ছোটবেলা থেকেই তুমি অন্যের দুঃখে দুঃখী হয়ে যাও, কারো সাহায্যে পিছপা হও না। এটা তোমার একটা অন্যতম ভালো গুণ যেটা তুমি তোমার বাবার কাছ থেকে পেয়েছ। কিন্তু তিনি কিন্তু যাদের সাহায্য করেছেন, সেই মানুষগুলো সেই সাহায্যের কথা ভুলে গেলে বা তার সাথে কোন কারনে অন্যায় করলে তিনি কখনও সেই সাহায্যের বলিহারি দিতেন না, তাদের অকৃতজ্ঞ, কৃতঘ্ন বলে জীবনেও দুষতেন না, যেটা তুমি করো ইদানিং। ত্যাগ করতে শিখো। সবাইকে চোখে আঙুল দিয়ে সব বোঝাতে যেও না।
আবীর! তুমি এখন সেই ছোট্ট খোকাটি নও। যথেষ্ট বড় হয়েছ, এটাও হয়ত বুঝে এসেছে যে তোমার কাঁধে অনেক দায়িত্ব। এজন্য যেকোনো কাজ করার আগে, যেকোনো কিছু বলার আগে দশবার চিন্তা করবা। অনেক কিছু বললাম তোমাকে। আজ আর কিছু বলব না। এই চিঠিটা প্রতিরাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ফোনে রিমাইন্ডার হিসেবে সেইভ করে রাখবা। প্রতিদিন এটা একবার পড়ে মহান আল্লাহর কাছে নিজ ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে, বাবার জন্য দু'আ চেয়ে, নিজের ও পরিবারের অন্যান্যদের জন্য দু'আ চেয়ে পাক কালাম থেকে দু'আ দুরুদ পড়ে ঘুমাবা।
কি? এখনও আমাকে চিনতে পারোনি? হা! হা!!
ইতি-
বিবেগের চিঠি 📩
This post is licensed under CC BY 4.0 by the author.