প্রতিদিনের ন্যায় সেদিন রাতেও কানে স্টেরিও হেডসেট লাগিয়ে পিসিতে কাজ করছিলাম আর মা-মণি ভাত খাওয়ার জন্য ডাক দিলেন। তিনি জানেন মুখে ডাক দিলে কাজ হবে না, তাই ও'ঘর থেকে ফোন দেন। সেদিনও তাই করলেন। আমি কাজ রেখে বললাম যে খিদে নেই একটু পর আসছি। এর বেশ কিছুসময় পর আমি একঘেয়েমি কাটানোর জন্য আমার সেই স্বভাবসুলভ ধেড়ে গলায় গান ধরলাম। কিছুসময় পর মা-মণি উঠে এলেন, আমি প্রথমে খেয়াল করিনি। যখন খেয়াল করলাম, দেখি মা-মণি করিডোর ঘেষে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি তাকালে মৃদু স্বরে বললেন, "খেতে আয়, রাত হয়েছে অনেক।" আমি একটু অবাক হলাম। কারণ অন্য দিন হলে কম সে কম মাথায় একটা চাটি পড়ত। আমি তখনই উঠে খেতে বসে গেলাম। খেয়াল করলাম মা-মণি আলগোছে রিমলেস ফ্রেমের ফাঁক দিয়ে চোখের পানি মুছে আবার বইয়ের মধ্যে চোখ গুজে দিলেন। তখন আমি বুঝে গেলাম কারনটা। কেননা, আমি সেসময় মিফতাহ এর "ভালো থেকো" গানটি গাইছিলাম;
।। ভীষন আধারে ঘুম আসেনা তোমার বেলকনির আলো জ্বেলে রেখো মন ভুলে দরজাটা খোলা আছে কিনা একটু খেয়াল করে দেখো জানি মাঝরাতে পাবে পিপাসা তোমার মাথার পাশে জল রেখো পারবোনা ছুঁতে শুধু স্বপ্নে এসে বলব তুমি ভালো থেকো ।।
আমাকে ডাকতে এসে মান-মণি আমার ধেড়ে গলায় গাওয়া গানটি শুনছিলেন। আর সেসময় তাঁর বাবার কথা মনে পড়ে যায়। প্রকৃত ভালোবাসাগুলো এমনই হয়। যা আজকালকার ট্রেন্ডি ভালোবাসাগুলোতে দেখা যায় না। যেখানে আজকালকার ভালোবাসায় ফোনে বিভিন্ন আদুরে সম্বোধনে দীর্ঘ কথোপকথন চলে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভালোবাসায় ভরপুর স্ট্যাটাস থাকে, কিন্তু ক'দিন পর ফোনের ওপারের মানুষটির পরিবর্তন ঘটে। সেখানে প্রকৃত ভালোবাসায় ওপারের দেশে যাত্রা করা মানুষটির জন্য এপারের মানুষটি আজও অশ্রু ঝড়ান......