We Love Science 💤

ঠিক কীভাবে শুরু করব বুঝতেছি না। আসলে আমাদের দেশের সার্বিক উন্নতির একমাত্র অন্তরায় হল আমাদের অবর মূল্যবোধ! এখানে মেকি প্রভাবকের অভাব নাই। আপনি এখানে একটাও প্রকৃত দাতাগোষ্ঠী পাবেন না যারা বাস্তবিক অর্থে এদেশের বৈজ্ঞানিক মুক্তির জন্য কাজ করতে চায়। মানুষ অর্থনৈতিক মুক্তির কথা বলে তবে এখানে এরুপ বিশেষণ একারণে ব্যবহার করলাম কেননা এই বৈজ্ঞানিক মুক্তি ব্যাতীত কোনো জাতির উন্নতি সম্ভব নয়। আপনি বিশ্বের এমন একটি জাতির eg. দিন তো যারা বিজ্ঞানের কলকাঠি না নাড়িয়ে উত্তোরোত্তর উন্নতি করেছে আর এখনও ক্রমবর্ধমানভাবে করে যাচ্ছে; দেওয়া সম্ভব না! আমাদের দেশও এ স্রোতের বিপরীতে গিয়ে কিছুই করতে পারবে না।

কিন্তু এদেশের সামগ্রিক অবস্থা ও শিক্ষাব্যাবস্থা এদেশের ছেলেমেয়েদের প্রতি বিজ্ঞান নিয়ে একটা ভীতি ও ভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে এবং উত্তোরোত্তর করছে। এখানে আপনি বিজ্ঞান বিভাগে সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষার্থী পাবেন প্রতি বছর, পাবলিক পরীক্ষাগুলাতে প্রতিবছর জিপিএ ৫ এর ফুলঝুড়ি দেখবেন কিন্তু এদের সিংহভাগই ভাড়েই ভবানি। প্রমথ চৌধুরীর বলা কথাটা বেশ মনে পড়ছে; "এখানে কেউ স্বশিক্ষিত হতে চায় না, সকলেই চায় সুশিক্ষিত হতে!" এজন্যই এখানকার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ গুলাতে ভর্তি নেওয়া হয় মেধার ভিত্তিতে নয়, কে কত বেশী গলাধঃকরণ করে সেটা কত স্বল্প সময়ে উদগিরন করতে পারে, তার দৌড়ে। এদেশে শিক্ষার্থীদের গতিবিদ্যা পড়ানোর শুরুতে তাদের প্রশ্ন থাকে, "ভাইয়া, এ অধ্যায় থেকে কি শেষ বছর প্রশ্ন হয়েছে? আমরা কি কোনো সেট পাব এখান থেকে? আচ্ছা ভাইয়া, আগে বলুন তো এখানে কোন কোন টপিক এবছর হাইরেটেড ইম্পর্টেন্ট?"
এদেশের স্কুলগুলাতে গেলে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানপাঠে অনীহার দৃষ্টান্ত পাওয়া যাবে ভুড়ি ভুড়ি। অবশ্য এদেশে সরকারি স্কুলগুলাতে পাঠদানের কোনো বালাই নাই। স্কুলগুলাতে কিছু একাডেমিক টাইট্রেরিয়া চলে আর বছরঘুরলেই এঁরা পরীক্ষা নিতে তৎপর। শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা কোচিং ও ব্যাচভিত্তিক। এজন্যই হয়ত ক্লাসের বেঞ্চগুলাতে কিছু সুপ্ত প্রতিভা এভাবে প্রস্ফুটিত হয়,"বিজ্ঞানে অজ্ঞান, ভুগোলেতে গোল, অঙ্কেতে মাথা নেই, হলাম পাগল..."

তবে এখানে যাঁরা সত্যিকার বিজ্ঞানপ্রেমী আছেন, যাঁরা এদেশে বৈজ্ঞানিক মুক্তির গুরুত্ব উপলব্ধি করেছেন, তাঁরা তাঁদের স্ব স্ব অবস্থানে থেকে এর জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। আমি এদেশে একজন অতি নগন্য তুচ্ছ মানুষ। এখানকার অসুস্থ মেধা যাচাইয়ে নির্দিষ্ট সময়ে পর্যাপ্ত উদগিরনে অক্ষম হওয়ায় এখানকার সাপেক্ষে আমার দেওয়ার মত পরিচয় নেই। তবে আমি একজন বিজ্ঞানপ্রেমী। তাই এখানকার কিছু স্বগোত্রীয় মানুষদের সাথে বৈজ্ঞানিক মুক্তির জন্য কাজে নেমেছি। এরই প্রয়াসে আমরা একটা বিজ্ঞানক্লাব খুলেছি। স্কুলের ছেলেমেয়েদের মধ্যে বিজ্ঞানমনষ্কতা সৃষ্টিতে হাইস্কুল স্টুডেন্টদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতামূলক বিজ্ঞানচর্চা করাতে চেয়েছিলাম। এজন্য সপ্তাহ জুড়ে নানা ধরনের তোড়জোড় চলে আমাদের। ভালো সাড়াও পাওয়া যাচ্ছিল প্রতিযোগিদের; তবে সপ্তাহজুড়ে আমাদের করা সকল আয়োজন আর খাটাখাটনির কোনো কাঙ্খিত সমাপ্তি হল না। কেননা এখানে দাতা প্রতিষ্ঠানরা আপনার ভালো উদ্যোগের জন্য স্পন্সরশিপ নেন না, এখানে সকল কর্মকান্ড ব্যক্তিগত লাভক্ষতির বিচারে হয়।
তবে বলব না আমাদের সকল কষ্ট বিফলে গেছে। আমরা অনেক কিছু শিখেছি এটা থেকে যা আমাদের ভবিষ্যতে অনেক কাজে দিবে। আর হ্যাঁ; আমাদের বিজ্ঞানক্লাবটি থেমে থাকবে না! এদেশে একদিন বৈজ্ঞানিক মুক্তি আসবে! দীর্ঘজীবী হবে আমাদের We Love Science!